চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দিদের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৮৫৩ জন হলেও সাম্প্রতিক বন্দী রয়েছে ৭ হাজারের অধিক। যা ধারণক্ষমতার চার গুণ মাত্রাধিক্য। জেল কোড অনুযায়ী প্রতি বন্দীর জন্য ৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্র¯ে’র জায়গা বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও একজন বন্দীর ¯’লে থাকতে হ”েছ চার থেকে পাঁচ জন। জায়গার সংকটে অনেকই নির্ঘুমে কাটা”েছ রাত। সকালের খাবার দুপুরে আর দুপুরের খাবার পা”েছ বিকেলে। ভিড়করণে থাকতে গিয়ে অনেকেই অসু¯’ হয়ে পড়ছেন। কারা অভ্যন্তরে ১০০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। যার ফলে পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সেবা পা”েছনা বন্দীরা।

তারিখ না পেছলে আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। চট্টগ্রামের বিভক্ত রাজনীতি ঐক্যবদ্ধ না হলে ভয়াবহ সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। আর এই নির্বাচনী সহিংসতায় কারাগারে বন্দী বলয়ের সম্ভবনা রয়েছে। কারাগারে সাম্প্রতিক যে পরিমাণ বন্দী রয়েছে নাজুক অব¯’ায় রয়েছেন বন্দীরা। বলয় হলে কারাগারের বন্দীদের জীবনে আরও ভয়াবহ রূপধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কারা সূত্রে, চট্টগ্রাম নগরীর ১৬টি থানা এবং জেলার ১৬টি থানার বিভিন্ন মামলার আসামি ও সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিকে রাখা হয় এই কারাগারে। সাম্প্রতিক কারাগারে বন্দী রয়েছে ৭ হাজার ৪৩২ জন। এর মধ্যে রয়েছে ৩১৪ জন নারী বন্দী ও ৭ হাজার ১১৮ জন পুর“ষ বন্দী। তাছাড়া প্রতিদিনই বিভিন্ন মামলার আসামি আসছে এই কারাগারে। বন্দীদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী রয়েছে ৮৬২ জন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত রয়েছে ৫৭ জন। এর মধ্যে নারী বন্দী রয়েছে ২ জন। হুজি, জেএমবি, নব্য জেএমবি, আল্লাহর দল, হিযবুত তাহরীর, আনসার আল ইসলাম, হামজা ব্রিগেডসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী ও অর্ধশতাধিক দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০-১৫ জন দুর্র্ধষ জঙ্গি।

চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং (১ মার্চ) কয়েকজন কারাবন্দির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারাগারে বন্দিরা পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হ”েছ। অতিরিক্ত বন্দীর কারণে খাওয়া-থাকায় খুব কষ্টের সম্মুখীন হতে হ”েছ। একজন বন্দীর ¯’লে থাকতে হ”েছ চার থেকে পাঁচ জন। জায়গার সংকটে অনেকেই নির্ঘুমে কাটা”েছ রাত। সকালের খাবার দুপুরে আর দুপুরের খাবার দি”েছ বিকেলে।

তাছাড়া যে খাবার দেয়া হয় তার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। অনেক স”ছল বন্দী এ খাবার খেতে না পেরে ক্যান্টিন থেকে বেশি দামে কিনে খা”েছ। কারা ক্যান্টিনে বাইরের চেয়ে প্রত্যেক জিনিসপত্রের দাম দুই থেকে তিনগুণ বেশি। এর বাইরে কিছু প্রভাবশালী বন্দীর দাপটে তট¯’ থাকে কারাগারের নিরীহ বন্দীরা। সে সঙ্গে কারাগারের ভেতর আছে বন্দী বাণিজ্য এবং বাইরে আছে সাক্ষাৎ বাণিজ্য। ভিড়করণে থাকতে গিয়ে অনেকেই অসু¯’ হয়ে পড়ছেন। কারা অভ্যন্তরে ১০০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। যার ফলে পর্যাপ্ত চিকিৎসা-সেবা পা”েছনা বন্দীরা। অনেকই চমেক হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হ”েছ। সঠিকভাবে খাবার না পাওয়ায় বন্দীরা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনতে বাধ্য হ”েছ। কারারক্ষীদের ফোন থেকে স্বজনদের কাছে ফোন দিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেয় বন্দীরা।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র জেল সুপার মো. কামাল হোসেন বলেন, কোন একসময় এই কারাগারে ১০ হাজার ৯৮৩ জন বন্দী ছিল। তারপরও সুশৃঙ্খলভাবে বন্দীদের রাখতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমান বন্দী রয়েছে ৭ হাজার ৪৩২ জন, বন্দীদের রাখতে কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি হ”েছ না। কঠোর নজরদারিতে থাকে প্রতিটি বন্দী। বিশেষ করে জঙ্গি, দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী, দাগি অপরাধীদের চোখে চোখে রাখা হয়।

নির্বাচনী সহিংসতায় বন্দী বলয়ের সম্ভবনা রয়েছে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা সে বিষয়ে আপনাদের দিক থেকে বন্দীদের রাখার জন্য কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ হাজার ৯৮৩ বন্দী সুশৃঙ্খলভাবে রাখতে সক্ষম হয়েছি তার চেয়ে বেশি হলেও সুশৃঙ্খলভাবে রাখতে পারবো আশাবাদী।

তিনি বলেন, কারাগারে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তারমধ্যে শতকরা ৮০-৯০ শতাংশ হয়েছে গত এগারো বছরে। সরকার নতুন নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে সমস্যা থাকবে না। বন্দীদের বিনোদনের জন্য টেলিভিশন ও খেলাধুলার ব্যব¯’া রয়েছে। কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের ব্যব¯’া। সবাইকে ভালভাবে রাখার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এখানে বন্দীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের তৈরি করা পণ্য বিক্রি করে অর্ধেক মুনাফা তাদেরকে দেয়া হয়। তাদেরকে আনন্দে রাখার সকল ব্যব¯’া নেয়া হয়েছে। বন্দীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিন স্লিপ পদ্ধতি চালু রয়েছে। স্লিপের একটি অংশ বন্দির কাছে, একটি অংশ স্বজনদের কাছে এবং আরেকটি অংশ কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে। কোন ধরনের ফি ছাড়াই সাক্ষাৎ করা যায় বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের এই কেন্দ্রীয় কারাগার বন্দী সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারাগার। চট্টগ্রাম জেলার কোতয়ালী থানাধীন ঐতিহ্যবাহী লালদিঘীর পূর্ব পার্শ্বে ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম জেলা কারাগার। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের (১৬ সেপ্টেম্বর) ১৬ দশমিক ৮৭ একর জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। তন্মধ্যে কারাভ্যন্তরে ভূমির পরিমাণ রয়েছে ১১ দশমিক ৫৫ একর। কারাগারের বাইরে ভূমির পরিমাণ রয়েছে পাঁচ দশমিক ৩২ একর।