দেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। লকডাউন কিংবা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেও কমানো যাচ্ছে না সংক্রমণ ও মৃত্যু। শুক্রবার সারা দেশে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১০৮ জন। ওই দিন সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৫ হাজার ৮৬৯ জনের শরীরে এবং সংক্রমণের হার ছিল ২১ দশমিক ২২ শতাংশ। বলা বাহুল্য, একদিনে ১০৮ জনের মৃত্যু, যা এ পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা, আতঙ্কজনকই বটে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে আগামীকাল থেকে সাত দিনের জন্য সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় জরুরি পরিষেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে পুলিশ ও বিজিবি, প্রয়োজনে থাকবে সেনাবাহিনীও। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। শুধু চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারবে।

সারা দেশে কঠোর লকডাউনের সরকারি সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী বলা যায়। প্রথমত, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দেশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শুক্রবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগেই করোনায় মারা গেছেন যথাক্রমে ২৩ ও ১৪ জন। দ্বিতীয়ত, লক্ষ করা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অবহেলা ও উদাসীনতা রয়েছে। অনেক এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে বটে, কিন্তু তা শতভাগ কার্যকর করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে কঠোর লকডাউনের কোনো বিকল্প ছিল না। আমরা মনে করি, এবারকার লকডাউনের নির্দেশাবলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। লকডাইনের নিয়মাবলি ভঙ্গ করলে থাকতে হবে শাস্তির ব্যবস্থা। তবে লকডাউন বাস্তবায়নের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে সাধারণ মানুষের ওপর। সাধারণ মানুষের সচেতনতাই লকডাউন কার্যকরের সবচেয়ে বড় উপায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা পরিস্থিতি বর্তমানে যে পর্যায়ে এসেছে, এজন্য মূলত দায়ী সাধারণ মানুষের অসচেতনতা।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। সে সময় সব অফিস-আদালত, কল-কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছিল, সব ধরনের যানবাহনের ওপরই ছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এই সাধারণ ছুটি বা ‘লকডাউন’ সেভাবে কার্যকর করা যায়নি। মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয় দুটি হয়েছিল উপেক্ষিত। আমরা আশা করব, এবারের কঠোর লকডাউনে যেন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সরকারি নির্দেশাবলি ও স্বাস্থ্যবিধি-উভয়ই মেনে চলতে হবে সর্বসাধারণকে। তবে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। কঠোর লকডাউনে বিশেষত খেটে খাওয়া মানুষের যেন খাদ্যাভাব না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে সরকারকে। প্রয়োজনে তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে নগদ অর্থ কিংবা খাদ্যসামগ্রীর। এবারের কঠোর লকডাউন শতভাগ সফল হোক-এটাই প্রত্যাশা

লেখকঃ বিশেষ প্রতিবেদক শ্যামল বাংলা ডট টিভি | সদস্য ডিইউজে | ও প্রকাশক জ্ঞান সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান |