কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দেড় লক্ষ টাকায় বিনিময়ে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের সাতপাকিয়া পুকুরপাড় এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটেছে।

অভিযুক্ত সেলিম রেজা খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খোকসা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, খোকসা উপজেলার ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ পান হারুন আর রশিদ (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ । কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সেই ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে মন্টু ব্যাপারীর কাছে। সেলিম রেজার কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা বিনিময়ে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘরটি কিনে সেখানে মন্টু ব্যাপারী ও তার পরিবার বসবাস করছেন। আর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া হারুন অর রশিদ থাকেন ওই ঘরের বারান্দায় । মন্টু ব্যাপারী ও হারুন অর রশিদ ওই গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সাতপাকিয়া গ্রামে ১৩টি ঘর নির্মাণ করেন উপজেলা প্রশাসন। ১৩টি ঘরের মধ্যে একটি ঘর বরাদ্দ পান হারুন অর রশিদ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ঘরের চাবি দেওয়া হয়।

কিন্তু শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে আর প্রচন্ড শীতের মধ্যে বৃদ্ধ হারুন অর রশিদ বারান্দার এক কোনায় টিন ও কাপড় দিয়ে ঘেরা মেঝেতে বসে আছেন।

হারুন অর রশিদের মেয়ে খাদিজা খাতুন বলেন, অনিয়মের মাধ্যমে আমার বাবার বরাদ্দকৃত ঘরে মন্টুর ব্যাপারী ও তার পরিবার বসবাস করছেন। ঘরটি বাবাকে দিয়ে দেওয়া হোক।
প্রচন্ড শীতে বাবা ঘরের বারান্দায় খুব কষ্ট করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এ বিষয় মন্টুর বেপারীর স্ত্রী মুসলিমা খাতুন বলেন, খোকসার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজার মাধ্যমে দেড় লক্ষ টাকা দিয়ে গত ২৪ এপ্রিল ঘরটি কিনেছি। আমার কাছে ৩০০ টাকার লিখিত স্ট্যাম্প রয়েছে হারুন অর রশিদ বৃদ্ধ মানুষ। তাই ঘরের বারান্দায় তাকে থাকার জায়গা দিয়েছি।

তবে অভিযোগের বিষয়ে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে খোকসা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, অভিযুক্ত সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ঘর ক্রয় বিক্রয়ের সাথে আমি মোটেও জড়িত নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বিক্রি করা এটা মেনে নেওয়া যায় না। দলের সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা হলে খোকসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিপন বিশ্বাস বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র সেই ব্যক্তিই ওই ঘরে বসবাস করতে পারবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কোনোভাবেই বিক্রি বা হস্তান্তরের সুযোগ নেই। সরকারি আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি করা আইনত অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুস সাদাত আজ তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি এখনো হাতে পায়নি। তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেয়ার পরে অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিষয়ে এর আগে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে যখন জানতে পারলাম হারুন অর রশিদ (৭০) নামে বরাদ্দকৃত ওই ঘরে তিনি বসবাস করেন না, করেন মন্টু ব্যাপারী ও তার পরিবার। তখন ঘরটি তালা মেরে দিয়েছিলাম। এরপর আমার কাছে হারুন অর রশিদ একটি দরখাস্ত নিয়ে কান্নাকাটি করেন। মানবিক বিবেচনায় পুনরায় ঘরটি তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নতা রূপ নিয়েছে। আগে অভিযোগ ছিল যার ঘর সে বারান্দায় থাকে আর দখল করে রেখেছে অন্যজন। এখন অভিযোগ উঠেছে ঘরটি অবৈধভাবে টাকায় বিনিময়ে ক্রয় বিক্রয় হয়েছে।